শিরোনাম
প্যাডেলরিকশা চালানো খুবই কষ্টসাধ্য ও পীড়াদায়ক
Jahangir Alam babu | ১১:২৩ এএম, ২০২০-০৯-০৪
জাহাঙ্গীর আলম বাবু: সুধীজনের কথা- প্রযুক্তিকে অস্বীকার ও বন্ধ করে রাখা ঠিক নয়; বিশেষ করে যে প্রযুক্তি দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় এবং জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে রিকশা চালক-মালিকের দাবী মানবসভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অকল্পনীয় অগ্রগতি ও উৎকর্ষের এ কালেও দেশের লাখ লাখ মানুষকে কেন মানুষ টানার মতো একটি অমানবিক পেশায় নিযুক্ত থাকতে হবে; এ প্রশ্ন তোলা খুবই ন্যায়সংগত। এটা জাতির জন্য অবশ্যই লজ্জা ও অবমাননাকর! জাতির কপাল থেকে এই কলঙ্কতিলক মুছে ফেলার এখনই সময় । এটা অনস্বীকার্য যে, প্যাডেল চালিতরিকশা চালনার পেশা প্রকৃতপক্ষে অমানবিক ও সামাজিকভাবে অমর্যাদাকর।
প্যাডেলচালিত রিকশা কে বিদ্যুৎচালিত পরিবেশ ও যাত্রীবান্ধব তথা মানবিক রিকশা হিসেবে প্রতিস্থাপন করতে চলতি বছরের ১৬ আগষ্ট মাত্র ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনকে চিঠিদেয় চট্টগ্রাম বিদ্যুৎচালিত পরিবেশ ও যাত্রীবান্ধব রিকশামালিক সমিতি। ৭ দিনের সময় ২০ দিন শেষ হলেও এখনও এই বিষয়ে কোন সুরাহ করতে পারেনি চসিক প্রশাসক।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলছে- তারা অকটেন, পেট্রোল ও সিএনজি চালিত যন্ত্রযান মোটরগাড়ির লাইসেন্স দেয়। অটো গাড়ি যন্ত্র চালিত নয়। ওটা ব্যাটারিতে চলে। এই যানের লাইসেন্স প্রদানের অধিকার তাদের নেই।
সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের ভাষ্য- তারা পায়ে চালিত (প্যাডেল) রিক্সা চলাচলের লাইসেন্স দেয়। ব্যাটারি চালিত রিক্সা চলাচলের লাইসেন্স দেয়া তাদের কাজ নয়। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কথা নগরীতে যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং সিএনজি চালিত অটোরিক্সাসহ লাইসেন্সবিহীন যানবাহন চলতে না দেয়া তাদের কাজ। অটো ও ব্যাটারিচালিত রিক্সার কোন লাইসেন্স নেই সে জন্য জট বাঁধলেই তা সরিয়ে দিতে হবে, তা যেভাবেই হোক।
যাত্রী প্রতিনিধিরা বলছে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের লাইসেন্স যদি না-ই দেয়া যাবে তাহলে বিদেশ থেকে আমদানি করা হলো কেন। আমদানি করার সময় তো সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়েছে। ব্যাটারি চালিত এই অটো যন্ত্রযান দেশে এসেছে বেশ কয়েক বছর আগে। দেশের প্রতিটি শহর ও নগরীতে এই অটো গাড়ি চলছে। যাত্রী সাধারণের চলাচলে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে। তা ছাড়া যাত্রী পরিবহনের এই খাতটি বিপুল কর্মক্ষম দিশাহারা বেকার জনগোষ্ঠীর আত্মকর্মসংস্থানের একটি নির্ভরযোগ্য ক্ষেত্র হচ্ছে।
সাধারণ নাগরিকে প্রশ্ন অটোরিকশা নামে অধিক পরিচিত ব্যাটারি চালিত যন্ত্রযান। প্যাডেল রিকশায় মোটর ও ব্যাটারি লাগিয়ে দ্রুতগামী রিকশা। এসব যানবাহনের চলাচলের অনুমতিদানকারী প্রতিষ্ঠান কে? এই রিকশা গুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে অনেকদিন ধরে, যা দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে গেছে; এখনও যাচ্ছে।
সূত্র বলছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে প্যাডেল চালিত রিকশার নিবন্ধন আছে ৭০ হাজার। গত বেশ কয়েকবছর ধরে প্রায় এক তৃতীয়অংশ নবায়ন করা হয়নি। চট্টগ্রাম নগরীতে প্যাডেলচালিত রিকশাচালকদের অধিকাংশ বয়োবৃদ্ধ। পাহাড়বেষ্টিত এই নগরীর প্রায় সড়কই বেশ উঁচু নিচু ও অসমতল। বিপুল সংখ্যক বয়োবৃদ্ধ চালকের পক্ষে প্যাডেল চালিত রিকশা চালানো খুবই কষ্টসাধ্য ও পীড়াদায়ক।
রিকশা মালিকদের দাবী ও নগরীর যাত্রী সাধারণের কর্মঘন্টার মূল্যায়ন করে প্যাডেলচালিত রিকশাকে স্মাট-অটোরিকশা হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নিবন্ধন দিলে প্রতিবছর রিকশা প্রতি ৫০০ টাকা করে প্রায় ৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলেও চিঠিতে বলা হয়েছে।
প্যাসেঞ্জার ভয়েসের সূত্র বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা এই রিকশা গুলোকে নিবন্ধন দিয়েছে। তাদের মধ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন স্মাট-অটোরিকশা নামে নিবন্ধন দিয়ে রিকশা প্রতি বছরে ৪০০ টাকা রাজস্ব আদায় করছে। এদিকে রামগঞ্জ পৌরসভাও মোটরচালিত রিকশা নামে নিবন্ধন দিয়ে রিকশা প্রতি বছরে ২৫০ টাকা রাজস্ব আদায় করছে।
চট্টগ্রাম বিদ্যুৎচালিত পরিবেশ ও যাত্রীবান্ধব রিকশামালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা ওয়াজি উল্লাহ প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রনের স্বার্থে বর্তমানে ৭০ হাজার রিকশা লাইসেন্স থেকে ১০ হাজার কমিয়ে ৬০ হাজারে সীমিত করে, প্যাডেলচালিত রিকশা লাইসেন্সগুলো রূপান্তরিত করে স্মাট-অটোরিকশা বানানো হলে নগরীর যাত্রীপরিবহনে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হবে।
মালিক সমিটির দেয়া চিঠি চসিক প্রশাসকের কাছে তারা ৭ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন করেন। অন্যথায় মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আশ্রয় গ্রহনের হুংকারও দিয়েছেন তারা।
বিষয়টি জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেন নি।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.